৭ মাস বন্দী জীবন: এক নারীর করুণ কাহিনী
ঢাকার ডেমরা থানা পুলিশের একটি অভিযানে উদ্ধার হয়েছে এক নারী, যাকে প্রায় সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই নৃশংস ঘটনার পেছনে জড়িত রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ একটি কলের মাধ্যমে নারীটিকে উদ্ধার করা হয় এবং পরবর্তীতে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বিস্তারিত
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমানের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত নভেম্বরে নোবেল ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে গুলশানে দেখা করার কথা বলে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তাকে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ডেমরার একটি বাসায় আটকে রাখেন। দীর্ঘ সাত মাস ধরে নোবেল তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং বারবার ধর্ষণ করেন।
আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, নোবেল নিজের মোবাইল ফোনে এই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে নোবেলকে এক নারীকে সিঁড়ি দিয়ে জোর করে টেনে নামাতে দেখা যায়। ওই নারীই ছিলেন এই ভুক্তভোগী ছাত্রী।
৯৯৯ কল ও পুলিশের তৎপরতা
ভিডিওটি দেখে ছাত্রীর পরিবার টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিস্তারিত জানতে পারেন। এরপর তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চান। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে গতকাল রাত ১০টার দিকে ডেমরার একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নোবেল পালিয়ে যান, তবে রাত ২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মাহমুদুর রহমান জানান, নোবেল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন, কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা
নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া, পর্নোগ্রাফি আইনের অধীনেও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কারণ তিনি ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করছিলেন।
সমাজের জন্য একটি বড় প্রশ্ন
এই ঘটনা আমাদের সমাজে নারী নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হয়েও কীভাবে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়লেন? নারীরা কেন আজও নিরাপদ নয়? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এই ঘটনায় আশার আলো দেখালেও, আমাদের সচেতনতা ও সক্রিয়তা বাড়ানো জরুরি।
সতর্কতা ও করণীয়
পরিবারের সদস্যরা যেকোনো সন্দেহজনক আচরণে সতর্ক হোন।
জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৯৯ নম্বরে কল করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ও গতিবিধি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
কোনো প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিন।
এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধের গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের অন্ধকার দিককেও উন্মোচন করে। আশা করা যায়, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়া হবে এবং এর মাধ্যমে অন্যান্য অপরাধীরাও শিক্ষা পাবে।
আরও পড়ুন: স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণ ও ডাকাতি
#নারীনিরাপত্তা #ধর্ষণেরবিরুদ্ধে #ন্যায়বিচারচাই