একটি অমানবিক ঘটনা আবারও সমাজের বিবেককে নাড়া দিল
মাগুরা সদর উপজেলায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীকে ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে, যেখানে একাধিক ব্যক্তির অংশগ্রহণে এই নৃশংসতা সংঘটিত হয়। পুলিশ ইতিমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরী কথা বলতে ও শুনতে পারে না, মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রায়শই বেঁধে রাখতে হয়। শুক্রবার দুপুরে তার মা গোসল করতে গেলে কিশোরীটি বাড়ির বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে পাশের একটি পাটখেতে পাওয়া যায়, শরীরে কাদামাখা অবস্থায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, কিশোরীটিকে প্রথমে তার চাচাতো ভাই শাওন (২০) ধর্ষণ করে। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে টিপু (২২) নামের আরেক যুবকও তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির মা শনিবার মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
আদালতে স্বীকারোক্তি ও তদন্তের অগ্রগতি
গ্রেপ্তারকৃত শাওন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনিই প্রথমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন, পরে টিপু একই কাজ করে।
যেহেতু ভুক্তভোগী কিশোরী কথা বলতে অক্ষম, তাই বিশেষজ্ঞের সহায়তায় তার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এদিকে, শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও বিচার
এই ঘটনাটি মাগুরাবাসীর মনে ফের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এর আগে গত ৬ মার্চ মাগুরা পৌর এলাকায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মাথায় ট্রাইব্যুনাল এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও বাকি তিনজন খালাস পেয়েছিলেন।
সমাজের করণীয় কী?
এ ধরনের ঘটনা বারবার প্রশ্ন তোলে—আমরা কতটা নিরাপদ? বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ও অসহায় নারী-শিশুরা কেন বারবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছে? আইনের কঠোর শাস্তি থাকলেও অপরাধীরা কেন থামছে না?
সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি: প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার ও সমাজকে আরও সতর্ক হতে হবে।
দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা: ধর্ষণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা: ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
মানসিক প্রতিবন্ধী একজন কিশোরীর ওপর এই নিষ্ঠুরতা সমাজের অন্ধকার দিককেই উন্মোচন করে। শুধু আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না, প্রয়োজন সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন। আসুন, আমরা সকলে মিলে একটি নিরাপদ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে নারী ও শিশুরা নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারবে।
আরও পড়ুন: আছিয়া হত্যায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, বাকিদের খালাস – রায়ে অসন্তুষ্ট আছিয়ার পরিবার
#নিরাপদ_সমাজ #ধর্ষণের_বিচার #মানসিক_প্রতিবন্ধী_সুরক্ষা