পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় দুই বছরের অসুস্থ শিশুর গলায় ছুরি ধরে মাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই নৃশংস ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকি আসামিদের ধরতে তদন্ত চলছে।
ঘটনার বিস্তারিত
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতের অন্ধকারে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তিন মাইল সুরিভিটা এলাকার একটি চা বাগানের পাশে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী তার অসুস্থ শিশুকে নিয়ে ইজিবাইকে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে পরিচিত এক ইজিবাইক চালক তাকে নাম ধরে ডাকেন এবং থামতে বাধ্য করেন। এরপর তাকে ও তার শিশুকে জোরপূর্বক চা বাগানের নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে একদল যুবক শিশুটির গলায় ছুরি ধরে মাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। আতঙ্কিত মা চিৎকার করতে চাইলে তাকে মারধর ও হুমকি দেওয়া হয়। পরে একে একে ছয়জন তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর অচেতন অবস্থায় মা ও শিশুটিকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় অপরাধীরা।
পুলিশের তৎপরতা
স্থানীয়রা জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে। তাদের পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নারীর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য দেন, যার ভিত্তিতে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান জানান, “ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। নারীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে।”
ভুক্তভোগীর আকুতি: ন্যায়বিচার চাই
হাসপাতালের বেডে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার শিশুর গলায় ছুরি ধরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। এখন আবার কাছের মানুষজন আপোষের কথা বলছে। কিন্তু আমি চাই এই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হোক।”
চিকিৎসকদের বক্তব্য
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম বলেন, “ভুক্তভোগীকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল, তবে মানসিক আঘাত গুরুতর। ধর্ষণের প্রমাণ পেতে ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে।”
সমাজের নৃশংস রূপ: আমাদের করণীয়
এ ধরনের ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না, সমগ্র সমাজকে কলঙ্কিত করে। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাকে সাহায্য করতে সবাই এগিয়ে আসে।
শেষ কথ
এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন পাশবিক কাজ করতে সাহস না পায়। পাশাপাশি, সমাজের সকলকে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার নৃশংস হত্যাকাণ্ড: মা ও দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রামে আতঙ্ক
#নারীনির্যাতন #ধর্ষণেরবিচার #শিশুসুরক্ষা #পঞ্চগড়ঘটনা #ন্যায়বিচারচাই