আধুনিক জীবনে ফ্রিজ একটি অপরিহার্য গৃহস্থালি যন্ত্র। এটি শুধু খাবার তাজা রাখে না, বরং খাদ্য অপচয় রোধ করে এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায়। কিন্তু আপনি কি জানেন, ভুল ব্যবহারের কারণে আপনার ফ্রিজ মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে? সম্প্রতি ফ্রিজ বিস্ফোরণ, আগুন লাগা এবং শর্ট সার্কিটের মতো ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব দুর্ঘটনা এড়াতে জেনে নিন কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন।
১. পুরোনো ফ্রিজ ব্যবহার করা
ফ্রিজের আয়ুষ্কাল সাধারণত ১০-১৫ বছর। এর বেশি সময় ব্যবহার করলে এর অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে, বিশেষত কম্প্রেসার ও কুলিং সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়। পুরোনো ফ্রিজে বিদ্যুৎ সংযোগ দুর্বল হয়ে শর্ট সার্কিট বা অতিরিক্ত গরম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। তাই ফ্রিজ অনেক পুরোনো হয়ে গেলে পরিবর্তন করুন।
২. ফ্রিজে অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখা
অনেকেই ফ্রিজকে অতিরিক্ত জিনিসে ভর্তি করে রাখেন, যা ঠান্ডা বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এতে ফ্রিজের কম্প্রেসারকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়, ফলে এটি অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরণ বা আগুনের কারণ হতে পারে। ফ্রিজে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন এবং বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
৩. নিম্নমানের প্লাগ ও সকেট ব্যবহার
ফ্রিজের জন্য সবসময় ভালো মানের প্লাগ, সকেট এবং বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করুন। নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করলে শর্ট সার্কিট হতে পারে, যা ফ্রিজে আগুন লাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, ফ্রিজের প্লাগ যেন শক্ত করে লাগানো থাকে তা নিশ্চিত করুন।
৪. ভোল্টেজের ওঠানামা এড়ানো
বাংলাদেশের অনেক এলাকায় বিদ্যুতের ভোল্টেজের ওঠানামা দেখা যায়। এটি ফ্রিজের কম্প্রেসারের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ভোল্টেজে কম্প্রেসার পুড়ে যেতে পারে বা ফ্রিজ বিস্ফোরিত হতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে একটি ভালো মানের স্টেবিলাইজার ব্যবহার করুন।
৫. ফ্রিজের কুলিং গ্যাস লিক হওয়া
ফ্রিজে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস (কুলিং গ্যাস) লিক হলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এই গ্যাস দাহ্য এবং কোনো স্পার্ক বা আগুনের সংস্পর্শে এলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। যদি ফ্রিজ থেকে গ্যাসের গন্ধ পেয়ে থাকেন বা ঠান্ডা কম হয়, তাহলে দ্রুত একজন টেকনিশিয়ান দিয়ে চেক করান।
৬. ফ্রিজের রেগুলার মেইনটেনেন্স না করা
ফ্রিজের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। প্রতি ৬ মাসে একবার সার্ভিসিং করানো উচিত। এতে কম্প্রেসার, কয়েল এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়। ফ্রিজের পেছনের কয়েল ও কম্প্রেসার পরিষ্কার রাখুন, যাতে ধুলাবালি জমে গরম না হয়।
৭. ফ্রিজের আশেপাশে বায়ু চলাচলে বাধা দেওয়া
ফ্রিজের পেছনে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। অনেকেই ফ্রিজের পেছনে দেওয়াল লেগে রাখেন বা জিনিসপত্র রাখেন, যা তাপ নিষ্কাশনে বাধা দেয়। এতে ফ্রিজ অতিরিক্ত গরম হয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
৮. ফ্রিজ থেকে অদ্ভুত শব্দ বা গন্ধ আসলে উপেক্ষা করা
যদি ফ্রিজ থেকে কোনো অদ্ভুত শব্দ, গন্ধ, ধোঁয়া বা স্পার্ক বের হয়, তাহলে অবিলম্বে বৈদ্যুতিক বিশেষজ্ঞকে ডাকুন। এটি কোনো বড় সমস্যার পূর্বসংকেত হতে পারে, যা উপেক্ষা করলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিরাপদ থাকুন
ফ্রিজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি ফ্রিজ সংক্রান্ত যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন। সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন!
আরও পড়ুন: ৩৩ বছরের সংসার জীবনের উপলব্ধি: কীভাবে গড়ে তুলবেন সুখী পরিবার?
আপনার ফ্রিজের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!