বলিউডের রাজকুমার খ্যাত সাইফ আলি খান বর্তমানে একটি বড় ধরনের আইনি সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের একটি রায়ে তার পৈতৃক সম্পত্তিকে “শত্রু সম্পত্তি” ঘোষণা করা হয়েছে, যা তার পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে। এই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১৫,০০০ কোটি রুপি (প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার), যা সাইফ আলি খানের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার কথা ছিল।
কী ঘটেছে সাইফ আলি খানের সাথে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সম্প্রতি সাইফ আলি খানের করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এই আবেদনে তিনি তার পরিবারের প্রাচীন সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেছিলেন। আদালতের রায়ে এই সম্পত্তিকে “শত্রু সম্পত্তি” (Enemy Property) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যার অর্থ এটি এখন ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
ঘটনার পটভূমি
এই সম্পত্তির ইতিহাস বেশ জটিল এবং এটি ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময়ের সাথে জড়িত।
ভোপাল রাজ্যের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খান ছিলেন সাইফ আলি খানের প্রপিতামহ (দাদার দাদা)।
তার তিন কন্যার মধ্যে আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
অন্যদিকে, তার দ্বিতীয় কন্যা সাজিদা সুলতান (সাইফের দাদী) ভারতে থেকে যান এবং ইফতিকার আলি খান পতৌদিকে (সাইফের দাদা) বিয়ে করেন।
২০১৪ সালে, মধ্যপ্রদেশ সরকার “শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮” এর অধীনে নবাব হামিদুল্লাহ খানের সম্পত্তিকে বিদেশি/শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এর কারণ, তার মেয়ে আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, যা আইন অনুযায়ী এই সম্পত্তিকে সরকারের অধীনে নেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাইফ আলি খানের আইনি লড়াই
২০১৫ সালে, সাইফ আলি খান মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এই মামলা চলার পর, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেয়। এর ফলে, এখন এই সম্পত্তি ভারত সরকারের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
শত্রু সম্পত্তি আইন কী?
১৯৬৮ সালে পাস হওয়া “শত্রু সম্পত্তি আইন” অনুযায়ী, যেসব ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান বা চীনে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের সম্পত্তি ভারত সরকার দখল করতে পারে।
এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে যেন শত্রু রাষ্ট্রের সমর্থকদের সম্পত্তি ভারতের হাতে আসে।
সাইফ আলি খানের সম্পত্তি কি চলে যাবে সরকারের কাছে?
হাইকোর্টের রায়ে সাইফ আলি খানের আবেদন খারিজ হওয়ায় এখন এই সম্পত্তি মধ্যপ্রদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে। তবে, সাইফ আলি খান এখনও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ পাবেন, যেখানে তিনি শেষ চেষ্টা করতে পারেন।
এই রায়ের প্রভাব
সাইফ আলি খান ও তার পরিবার ১৫,০০০ কোটি রুপির সম্পত্তি হারাতে পারেন।
এই সম্পত্তিতে তার দাদী সাজিদা সুলতানের অংশ থাকলেও, আদালতের রায়ে তা বাতিল হয়েছে।
এটি বলিউড ও রাজনৈতিক মহলে বড় আলোচনার সৃষ্টি করেছে, কারণ সাইফ আলি খান একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
সাইফ আলি খানের আইনি টিম ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। যদি সেখানেও তার পক্ষে রায় না আসে, তাহলে এই বিশাল সম্পত্তি সরকারের হস্তগত হবে।
শেষ কথা
সাইফ আলি খানের জন্য এটি একটি বড় ধরনের আর্থিক ও মানসিক ধাক্কা। বলিউডের এই সুপারস্টার ইতিমধ্যেই পারিবারিক নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, এবং এই রায় তার জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্টে তার আইনি লড়াই কতটা সফল হয়।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত আর্সেনালের সাবেক তারকা থমাস পার্টি
আপনার কী মনে হয়? সাইফ আলি খান কি এই সম্পত্তি ফেরত পাবেন? নিচে কমেন্ট করে জানান!