বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে ২০২৫ সালের ১১ই জুলাই থেকে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা ও একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে।
কেন ছুটিতে পাঠানো হলো সায়মা ওয়াজেদকে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস একটি অভ্যন্তরীণ ই-মেইলের মাধ্যমে কর্মীদের জানিয়েছেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল শুক্রবার থেকে ছুটিতে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে ড. ক্যাথরিনা বোহমে অস্থায়ীভাবে আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।
সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ:
তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের পদে নিযুক্ত হওয়ার সময় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে, তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত বলে দাবি করেছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ অর্থ সংগ্রহ:
তার নেতৃত্বাধীন সূচনা ফাউন্ডেশন-এর নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু এই অর্থের সঠিক হিসাব দেওয়া হয়নি।
দুদকের মতে, তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে এই অর্থ সংগ্রহ করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এবং দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা লঙ্ঘন করে।
এই বিতর্কের পটভূমি কী?
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল।
অভিযোগ উঠেছিল যে, তার মায়ের রাজনৈতিক প্রভাব এই পদে তার নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে, সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তীব্র হয়।
বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দুদকের মামলার কারণে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে, যার ফলে তিনি বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার হিসেবে দেখছেন। তবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে?
যদি দুদকের তদন্তে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তার চাকরি স্থায়ীভাবে হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে এই ঘটনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনামকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপসংহার
এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির কর্মজীবনই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, তারা কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করে তাদের সুনাম রক্ষা করে।
আরও পড়ুন: সোহাগ হত্যা – আরও ১ জন গ্রেফতার, বিচার দাবিতে বিক্ষোভ
আপনার মতামত জানান: এই সিদ্ধান্তকে আপনি কতটা ন্যায্য মনে করেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন? কমেন্টে শেয়ার করুন।