সম্প্রতি মানিকগঞ্জে এক মর্মান্তিক ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটি আবারও উন্মোচন করেছে। এক তরুণীকে আত্মীয়তার সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে জোরপূর্বক মদপান করিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, যা শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব। আরও ভয়াবহ হলো, এই অপরাধে সহযোগিতা করেছেন অভিযুক্তের স্ত্রী। ঘটনাটি শুধু ধর্ষণই নয়, ব্ল্যাকমেইলিং ও সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধেও জড়িত।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা
২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর, মানিকগঞ্জের এক তরুণী তার দুলাভাই ছত্তার মিয়া (৪০) ও বড় বোন রুনা আক্তারের (৩০) আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতে যান। ছত্তার মিয়া জানান, তার স্ত্রী গর্ভবতী এবং এ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হতে বলেছিলেন। কিন্তু এই আমন্ত্রণই ছিল এক ভয়ঙ্কর ফাঁদ।
ধর্ষণের নির্মম পরিকল্পনা:
গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে ছত্তার মিয়া, তার স্ত্রী রুনা ও আরেকজন নারী সোনিয়া মিলে তরুণীকে জোরপূর্বক মদ পান করিয়ে অচেতন করে ফেলেন। পরের দিন সকালে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ভুক্তভোগী দেখেন, তিনি ছত্তার মিয়ার পাশে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন। তিনি বুঝতে পারেন, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ব্ল্যাকমেইলিং ও অশ্লীল ভিডিও ছড়ানো:
এরপরই শুরু হয় আরও ভয়াবহ অধ্যায়। ছত্তার মিয়া তরুণীর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। বারবার তাকে ব্ল্যাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। সবশেষ গত ১৮ জুন একটি ফেসবুক আইডি থেকে তার ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হলে তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন।
আইনের আশ্রয় ও পুলিশের তদন্ত
ভুক্তভোগী মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আমান উল্লাহ নিশ্চিত করেছেন যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে, সমাজের এমন ঘটনাগুলো শুধু আইনের মাধ্যমে দমন করলেই হবে না, নারী নিরাপত্তা ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
সমাজের ভূমিকা ও আমাদের করণীয়
১. আত্মীয়তার সম্পর্কে সতর্কতা: পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়দের বিশ্বাস করতে গিয়েও অনেক নারী প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই সবারই সচেতন থাকা জরুরি।
২. সাইবার অপরাধ রোধ: অশ্লীল ছবি বা ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে নারীদের ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. মাদক ও ধর্ষণের সংযোগ: মদ বা নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে নারীদের অচেতন করে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। এ ধরনের অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
উপসংহার
এই ঘটনা আমাদের সমাজের নারী নিরাপত্তার হালচিত্র আরও একবার ভাবিয়ে তোলে। শুধু আইন প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, নারীর প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে কোনো নারীই আর এমন নির্মমতার শিকার না হন।
“নারীর সম্মানই সমাজের সম্মান। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন হোন, প্রতিবাদ করুন।”
আরও পড়ুন: স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা: প্রতিবাদ করায় পরিবারে হামলার অভিযোগ