একটি মায়ের অদম্য সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প
মাত্র এক মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়েই পরীক্ষা দিয়েছেন, আর সেই পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছেন সারাদেশে প্রথম স্থান! রাজশাহীর বাগমারার কৃতি শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার প্রমাণ করেছেন যে সংকল্প থাকলে সব বাধাই জয় করা সম্ভব।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ডিগ্রি পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর ও জিপিএ অর্জন করে গোটা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছেন। হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজের বিএসসি শাখার এই মেধাবী ছাত্রীর এই সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, বরং সমগ্র নারীর জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
শামীমা আক্তারের শিক্ষাজীবনের উজ্জ্বল ধারা
শামীমা আক্তারের এই সাফল্য কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও পরিশ্রমী। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি এবং এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার মাধ্যমে তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এবার ডিগ্রি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন, অধ্যবসায় ও লক্ষ্যের প্রতি একাগ্রতা থাকলে সাফল্য আসবেই।
সন্তানের মাতৃত্ব ও পড়াশোনার মধ্যে সমন্বয়
শামীমা আক্তার শুধু একজন শিক্ষার্থী নন, তিনি একজন মা। তার এক মাস বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়েই তাকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তার ভাষায়, “মা হওয়া কোনো বাধা নয়, বরং এটি আমাকে আরও দৃঢ় করেছে। আমি চেয়েছি আমার সন্তান যেন একদিন গর্ব করে বলতে পারে, আমার মা কতটা সংগ্রাম করে সাফল্য পেয়েছেন।”
স্বপ্ন: ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে দেশের সেবা করা
শামীমার স্বপ্ন বড়। তিনি ভবিষ্যতে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে দেশের সেবা করতে চান। তার এই লক্ষ্য শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং সমাজের সকল নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সংসার, সন্তান ও পড়াশোনা—সবকিছুই একসাথে সামলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
কলেজ ও এলাকায় আনন্দের বন্যা
শামীমার এই অসাধারণ সাফল্যে হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, “শামীমা আক্তার আমাদের কলেজের গর্ব। তার এই সাফল্য শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই নয়, পুরো বাগমারা অঞ্চলকে গৌরবান্বিত করেছে।”
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীরা মনে করেন, শামীমার এই অধ্যবসায় ও সাফল্য নতুন প্রজন্মের মেয়েদের জন্য একটি মাইলফলক। তার জীবন সংগ্রাম দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে, বিশেষ করে যারা সংসার ও পড়াশোনার মধ্যে সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছে।
শেষ কথা: অদম্য ইচ্ছাশক্তির জয়
শামীমা আক্তারের গল্প শুধু একটি সাফল্যের গল্প নয়, এটি একটি অদম্য মনোবলের গল্প। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হয়। তার এই অর্জন শুধু একটি ডিগ্রির সনদ নয়, এটি একটি বার্তা—যে কোনো পরিস্থিতিতেই স্বপ্ন দেখা এবং তা পূরণ করা সম্ভব।
আপনিও কি জীবনের বাধাগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চান? শামীমা আক্তারের গল্প আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে।
আরও পড়ুন: SSC Result 2025 Marksheet with Number – চেক ও ডাউনলোড করুন
#শিক্ষা #সাফল্য #অদম্য_মহিলা #শামীমা_আক্তার #গবেষণা #মাতৃত্ব_ও_শিক্ষা