মুন্সীগঞ্জের একটি গুচ্ছগ্রামে এক ভয়াবহ ঘটনায় স্থানীয়রা ফুঁসে উঠেছে। একটি চার বছরের নিরীহ শিশুকে প্রতিবেশী এক যুবক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রামবাসীর হাতে মারধর ও প্রকাশ্যে অপমানিত হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি সোমবার সকালে ঘটলেও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব শিলমন্দী গুচ্ছগ্রামের এক শিশু নিজ বাড়ির উঠানে খেলছিল। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবেশী নাজমুল (১৮) শিশুটির কাছে গিয়ে তাকে মোবাইল ফোনে কার্টুন দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে সে শিশুটিকে ধর্ষণ করে।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর শিশুটির মা তাকে গোসল করাতে গেলে ধর্ষণের শারীরিক লক্ষণগুলো দেখতে পান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটি তার মাকে পুরো ঘটনা জানায়। মা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের খবর দিলে এলাকাবাসী রাগে ফেটে পড়েন।
গ্রামবাসীর প্রতিশোধ: চুল কেটে গাছে বেঁধে মারধর
অভিযুক্ত নাজমুলকে ধরে এনে প্রথমে তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। এরপর তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে মারধর করা হয়। উত্তপ্ত জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাজমুলকে গ্রেফতার করে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সজিব দে জানান, অভিযুক্তকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুর মা সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করেছেন।
শিশু ধর্ষণ: একটি জাতীয় সংকট
এ ধরনের ঘটনা শুধু মুন্সীগঞ্জেই নয়, গোটা দেশেই শিশুদের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়েরই প্রতিচ্ছবি। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
কী করা উচিত?
সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও স্কুলে শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।
দ্রুত বিচার: শিশু ধর্ষণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।
কঠোর শাস্তি: অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা ভয় পায়।
সামাজিক প্রতিরোধ: স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, তবে নিজে হাতে বিচার না করে আইনের সহায়তা নেওয়া উচিত।
উপসংহার
মুন্সীগঞ্জের এই ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামবাসীর প্রতিক্রিয়া হয়তো আবেগপ্রসূত ছিল, কিন্তু আইন নিজের হাতে নেওয়া কখনই সমাধান নয়। অপরাধীদের বিচার করতে হবে আইনের মাধ্যমে, জনতার রোষাণলে নয়।
আরও পড়ুন: শিবালিক শর্মার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ: বাগদানের প্রতিশ্রুতি ভেঙে ধর্ষণের মামলা
আপনার কী মনে হয়? শিশু ধর্ষণের মতো অপরাধ রোধে আমরা কীভাবে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান।