সম্প্রতি বরিশালে এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে। একটি স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ হোসেন আকনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হয়েছে, এবং আদালত ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এই ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আসুন, বিস্তারিত জানা যাক।
ঘটনার বিবরণ
মামলার বাদী হচ্ছেন ধর্ষণের শিকার মেয়ের মা, যিনি একজন বিধবা। তিনি জানান, তার বোন একজন পুলিশ কনস্টেবল। ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই, মেয়েকে পড়াশোনার তত্ত্বাবধানের জন্য বাবুগঞ্জ উপজেলার বকশির চর গ্রামে তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে মেয়েটির খালু সবুজ হোসেন আকন তাকে বিভিন্ন সময় বরিশাল শহরে নিয়ে যেতেন।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সবুজ মেয়েটিকে অসৎ প্রস্তাব দেন। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বরিশালের আমানাতগঞ্জ এলাকায় তার ভাড়াবাসায় নিয়ে গিয়ে বারবার ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মেয়েটির মা আরও জানান, ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর মেয়েটি তার কাছে ফিরে আসে এবং সবুজের অত্যাচারের কথা জানায়। এরপর আসামি একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে মেয়েটিকে তার স্ত্রী দাবি করেন এবং তাকে অপহরণের চেষ্টা চালান। এমনকি গৌরনদী উপজেলায় মেয়েটির নানাবাড়িতে গিয়েও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা
মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হয়েছে। আদালত কাউনিয়া থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে থানার ওসি নাজমুল নিশাত জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ এখনো তাদের হাতে পৌঁছায়নি।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেছেন, ভুক্তভোগী ও তার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসামি ও তার সহযোগীরা বারবার হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
আসামির বক্তব্য
মামলার আসামি সবুজ হোসেন আকন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এটি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম ইমরান বলেছেন, তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করা হবে।
সমাজের দায়িত্ব
এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। একটি মাত্র মেয়ের জীবন ধ্বংস করার পাশাপাশি এটি সমগ্র সমাজের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
আইনের শাসন: আশা করা যায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামাজিক সচেতনতা: এমন ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
উপসংহার
এই মামলা শুধু একটি ধর্ষণের ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজের অন্ধকার দিককেও উন্মোচন করে। আশা করা যায়, দোষী ব্যক্তি দ্রুত শাস্তি পাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: মিঠাপুকুরে ধর্ষণের চেষ্টা ও হামলা: নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ
আপনার মতামত জানান: এমন ঘটনায় আপনার প্রতিক্রিয়া কী? নিচে কমেন্ট করে শেয়ার করুন।