ভালোবাসার সংজ্ঞা দিতে যদি বলা হয় অনেকেই অনেকভাবে দিতে পারবেন। কিন্তু একটা প্রকৃত সত্য বলি – যেখানে আপনার প্রতি কেউ সম্মান প্রদর্শন করে না সেখানে আপনি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা খুঁজে পাবেন না। হয়তো এখন আমার এই কথাটিকে বিশ্বাস করতে আপনার কষ্ট হবে কিন্তু বাস্তব জীবনে যেদিন অপমানের স্বীকার হবেন সেদিন ঠিকই বুঝবেন। তবে হ্যা, অপমান হলেই আবার ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় না। সেই স্থানটা হচ্ছে পরিবার। পরিবারে মা, বাবা, ভাই-বোন ও অন্যান্য আরও অনেকেই থাকে। এখন আপনার মা কিংবা বাবা কিংবা বড় ভাই যদি কোনদিন আপনাকে কোন বিষয় নিয়ে অপমান করে আর আপনি যদি ধরে নেন আপনাকে তারা একটুকুও ভালোবাসে না তাহলে আপনি ভুল জায়গায় আছেন। তারা অপমানও করবে আবার বুকেও টেনে নেবে। হ্যা, গুটিকয়েক ক্ষেত্রে পরিবারের সাথে অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অনেক বড় বড় কারনে। সেটা আলাদা ব্যাপার।
এখন, আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যদি আপনাকে সম্মান না করে তাহলে এখানে ভালোবাসা নেই আমি এই কথাটাই বলবো। কারন, প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে আমরা জীবনের একটা সময় পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই। তার ভালো-মন্দ দেখভাল করি। তাকে আদর-যত্ন করি। তার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করি। আর সেই মানুষটাই যদি উঠতে বসতে আমাকে অপমান করে, আমাকে সম্মান না দিয়ে কথা বলে তাহলে সে যে আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে না এটা ধরে নেয়া যায়। অথবা সে ভালোবাসে কিন্তু তার স্বভাব-চরিত্রই এরকম। এখন প্রশ্ন জাগে, ভালোবাসার মধ্যে আবার এমনও চরিত্র আছে যে, মন চাইলেই অপমান করবে?
হয়তো কোন বিষয়ে মতের অমিল হলে সামান্য ঝগড়া-ঝাটি হতে পারে। দুই একদিন কথা বন্ধ থাকতে পারে। তাই বলে তো আপনাকে ছেড়ে আপনার স্ত্রী নিজের বাসায় চলে যেতে পারে না। আপনি বারবার না করা সত্ত্বেও সেই কথাতো বরখেলাপ করতে পারে না। ঝগড়া হলেই আপনি ক্ষমা চান, সে কোনদিন চায় না এরকম তো হতে পারে না। এরকম হলে বুঝতে হবে, আপনার স্ত্রী প্রথমত মূর্খ। দ্বিতীয়ত; মানুষকে কিভাবে সম্মান (বিশেষ করে নিজের স্বামী) করতে হয় তা জানে না। নিজের অবুঝ বুঝটাকেই সবসময় বড় মনে করে আর সঠিক মনে করে।
এরকম মানুষের সাথে পারা বড় দায়। এরকম কেউ যদি আপনার বউ হিসেবে আসে তবে আপনার জীবন তছনছ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যেকোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ভালোবাসা তো দূরের কথা, ভালোভাবে বেঁচে থাকবেন কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। এই জন্যই বলছি, যেখানে সম্মান নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই। আর যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে সংসার হয় কিভাবে! সংসার হওয়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না। দুজনার ভালোবাসা ব্যতীত একটা সংসার কোনভাবেই টিকতে পারে না। আজ না হোক কাল সেই সংসার শেষ হয়ে যাবেই যাবে।
ভালোবাসা মানে কি তা আমাদের বুঝতে হবে। এক কথায়, ভালোবাসা মানে হলো সুখে দুঃখে একজন অপরজনের পাশে থাকা। সেটা স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে হতে পারে, ভাই আর বোনের মধ্যে হতে পারে। বন্ধু আর বন্ধুর মধ্যে হতে পারে ইত্যাদি। তবে এখানে স্বামী স্ত্রীর কথাই আমি বলছি। একজন মানুষ (ছেলে বা মেয়ে) জীবনের ২০ কিংবা ২৫ থেকে ৩০ বছর হয়তো পরিবারের সাথে একাত্ম থাকে। এরপর সেই মানুষটা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর বাকি জীবনটা সেই সঙ্গী/সঙ্গীনীর সাথেই কাটাতে হয়। তাই একজন স্বামীর জীবনে একজন স্ত্রীর ভূমিকা অনেক। আবার, স্ত্রীর জীবনে স্বামীর ভূমিকাও অনেক। একজনকে ছাড়া আরেকজন কল্পনাতীত। আর তাই বৈবাহিক জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু অবধি ভালোবাসা ছাড়া টেকা বড় দায়।
আমি একটি বাস্তব উদাহরণ দেই। যারা খুব সুন্দর মেয়ে বিয়ে করে না (যেমন- দেখতে খানিকটা কালো বা শ্যামলা, ফেইস কাটিং কোনরকম বা সাদামাটা) তারা বৈবাহিক জীবনে হয়তো একটু বেশিই সুখী হয়। তাদের বউটা খুব সুন্দর না হলেও বউয়ের আচার-আচরণ, ব্যবহার খুব ভালো হয়। সেই দম্পতি সাধারণত সুখেই থাকে। অন্যদিকে, যারা খুব রূপবতী বউ পায়, তাদের সংসার অনেকাংশেই টেকে না। হয়তো বউটা অহংকারী হয়, নয়তো প্রেম করে অন্য কারও হাত ধরে চলে যায় কিংবা সংসারে সকাল-সন্ধায় ঝগড়া চলতেই থাকে। এটা যে শতভাগ সঠিক তা কিন্তু আমি বলছি না। মন্দ স্বভাগ সুন্দরের মধ্যেও আছে, আবার অসুন্দরের মধ্যেও আছে। তবে সুন্দরের মধ্যে সম্ভবত অহংকার, জেদ আর রাগ একটু বেশিই আছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আপনি আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, তাতে সমস্যা নেই।
এখন, আপনার স্ত্রী যেমনই হোক – সে যদি আপনার সাথে ভালো ব্যবহার করে, আপনাকে সর্বক্ষেত্রে সম্মান করে তবে এই স্ত্রীকে নিয়ে আপনি সুখে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। এমন স্ত্রীকে কখনোই ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়। অপরপক্ষে, আপনার স্ত্রী যতোই রূপবতী হোক না কেন – সে যদি আপনার সাথে অভদ্র আচরণ করে, আপনাকে পদে পদে শাসায়, অপমান করে, কথা না শোনে তাহলে এই স্ত্রী দিয়ে আপনি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই অসুখী থাকবেন। এখন, আমি বলবো না যে, এমন স্ত্রীকে ছেড়ে যান। শুধু এইটুকু বলবো – এমন সংসারে ভালোবাসা থাকলেও সেটা নামে মাত্র আছে। এটাকে ভাগ্যের পরিহাস বলা যায়। আর চাইলেই তো কাউকে ছেড়ে দেয়া যায় না। বিবাহ জীবনের জন্য বিশাল একটা ধাপ। এই ধাপকে সাবধাণতার সাথে গ্রহণ করা উচিত।
সবশেষে বলতে চাই, জীবনের সবকিছু নিজের ইচ্ছেমতো কখনো হয় না। জীবনে সুখ থাকবে এবং দুঃখও থাকবে। তবে নিজের মানুষের কাছ থেকে কেউ দুঃখ না পাক সেই কামনাই করি। তবে আমার এই লিখার মাধ্যমে আপনাকে শুধু এটুকু বার্তা দিতে চেয়েছি যে, ভালোবাসাটা কেমন হয়, কার কাছ থেকে পাওয়া যায়। এখন, বাস্তব জীবনে আপনি কেমন আছেন তা আমি জানি না। তবে আপনি নিজেই এখন বুঝতে পারবেন যে, আপনার প্রতি কার কতটুকু ভালোবাসা রয়েছে। নিজের বলার মতো কোন কথা থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। সবসময় ভালো থাকুন এই কামনা করে ইতি টানলাম।