চাঁপাইনবাবগঞ্জে সৎমা ও সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, ২৪ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার এক মর্মান্তিক ঘটনায় সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে এক ব্যক্তির মরদেহ দাফনের আগে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। গত সোমবার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বড় মরাপাগলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কী ঘটেছিল?
মৃত ব্যক্তি মাজেদ বিশ্বাস (৫০)। তাঁর দুই ছেলে পুলিশে চাকরি করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সৎমা ও বোনদের বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দাফনে বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত গ্রাম্য সালিসে সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের সিদ্ধান্ত হলে, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর মাজেদ বিশ্বাসের দাফন সম্পন্ন হয়।
পরিবারের ইতিহাস ও বিরোধের কারণ
মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রীর ১০ সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকি সাতজনের মধ্যে চার মেয়ে ও তিন ছেলে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। হামফুলের কোনো সন্তান না থাকলেও তিনি মাজেদের ছোট শিশুদের লালন-পালন করেন।
মাস ছয়েক আগে মাজেদ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও আবদুল জাব্বার (উভয়েই পুলিশ কর্মকর্তা) চিকিৎসার অজুহাতে বাবাকে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সম্পত্তি নিজেদের ও এক ভাতিজার নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। এ সময় হামফুল বেগমকে তালাক দেওয়ার নোটিশও পাঠানো হয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
লাশ দাফনে বাধা ও সালিসের রায়
মাজেদ বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ছেলেরা লাশ গ্রামে নিয়ে এলে, হামফুল বেগম ও অন্য আত্মীয়রা দাফনে বাধা দেন। ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গ্রাম্য সালিস বসে, যেখানে সিদ্ধান্ত হয়:
সম্পত্তি সব সন্তান ও স্ত্রীর মধ্যে সমবণ্টন হবে।
মরদেহ দাফনের আগে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এরপরই, ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে থাকার পর, মাজেদ বিশ্বাসের দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, “ঘটনার কথা জানামাত্র আমরা পুলিশ টিম পাঠাই। সালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।”
মৃত ব্যক্তির ছেলে লতিফুর রহমান (পুলিশ উপপরিদর্শক) এর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।
সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ: কী বলছে আইন?
বাংলাদেশের মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে স্ত্রী, সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয়দের নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে। কোনো সদস্যকে বঞ্চিত করলে তা আইনত অবৈধ। এ ধরনের বিরোধ আদালত বা স্থানীয় মধ্যস্থতায় সমাধান করা যায়।
শিক্ষণীয় বিষয়:
সম্পত্তি বণ্টনে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত।
পারিবারিক বিরোধে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা জরুরি।
মৃত ব্যক্তির শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব।
উপসংহার
এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও তুলে ধরেছে সম্পত্তির লোভ কীভাবে মানবিকতাকে শেষ করে। আইন ও ন্যায়ের পথে থেকে পারিবারিক বিরোধ সমাধান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও পড়ুন: জমির দলিল যাচাই করার পূর্ণ গাইড: বৈধতা নিশ্চিত করার উপায়
আপনার কী মনে হয়? সম্পত্তি নিয়ে এমন বিবাদ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানান।
#সম্পত্তি_বিবাদ #চাঁপাইনবাবগঞ্জ #আইন_ও_ন্যায়