রাজশাহীর বাগমারায় এক মর্মান্তিক ঘটনা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে এক নির্মম ধর্ষণের শিকার হয়েছে মাত্র ৯ বছর বয়সী এক বাকপ্রতিবন্ধী শিশু। গত সোমবার (২৩ জুন) রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন, এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।
কী ঘটেছিল?
শিশুটির পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, সে প্রতিদিন বিকেলে ফুল সংগ্রহ করে তাহেরপুর বাজারে বিক্রি করত। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সে কথা বলতে পারত না, ফলে প্রায়ই আশেপাশের মানুষের সহানুভূতির উপর নির্ভর করত। সোমবার দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। রাত ১০টার দিকে স্থানীয়রা তাহেরপুর কলেজ গেটের পাশে একটি বাগানে শিশুটিকে অচেতন ও বিবস্ত্র অবস্থায় আবিষ্কার করে। তার শরীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, এবং মুখ থেকে মদের মতো নেশাদ্রব্যের গন্ধ বের হচ্ছিল।
দ্রুত তাকে প্রথমে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, কিন্তু অবস্থা গুরুতর দেখে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন যে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং নেশাদ্রব্য প্রয়োগ করে অজ্ঞান করা হয়েছিল।
পুলিশের তদন্ত ও বক্তব্য
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং রক্তমাখা পোশাকসহ অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “শিশুটির পরিবার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছি। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
শিশুটির করুণ জীবনকাহিনী
শিশুটির চাচা জানান, তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর সে একা হয়ে পড়ে। মাত্র চার বছর বয়স থেকে সে তাহেরপুরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত, কখনও বাজারে, কখনও সিএনজি স্টেশনে রাত কাটাত। পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়িতে রাখার চেষ্টা করলেও সে সেখানে থাকতে চাইত না। প্রতিদিন ফুল বিক্রি করে যা পেত, তা দিয়েই তার জীবন চলত।
সমাজের নিষ্ঠুরতা ও আমাদের দায়িত্ব
এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর ওপর অত্যাচারের গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের নিষ্ঠুরতারই প্রতিচ্ছবি। একটি অসহায়, বাকপ্রতিবন্ধী শিশু কীভাবে সমাজের রক্ষাকবচহীন হয়ে পড়ল? কেনইবা তাকে এতটা নির্মমভাবে শিকার হতে হলো?
এই ধরনের ঘটনাগুলো প্রতিরোধে আমাদের সবার সচেতনতা জরুরি। প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অপরাধীরা কোনোভাবেই পার পেয়ে না যায়।
শিশুটির জন্য আমাদের সমবেদনা
এই মুহূর্তে শিশুটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। আমরা সবাই তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। পাশাপাশি, এই ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক—এটাই আমাদের দাবি।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল প্রেমের ফাঁদে তরুণী: ধর্ষণ ও পাচারের মর্মান্তিক কাহিনী
আপনার কী মনে হয়?
এই ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? আপনার মতামত কমেন্টে জানান। শেয়ার করে সবাইকে সচেতন করুন।