বিনোদন জগতের আলোচিত মুখ উরফি জাভেদ সম্প্রতি কর্ণ জোহরের রিয়্যালিটি শো ‘দ্য ট্রেটর্স’ জয়ী হয়েছেন। কিন্তু বিজয়ের আনন্দের বদলে তিনি পাচ্ছেন ধর্ষণ ও খুনের হুমকি! শুধু তাই নয়, তাঁকে ‘যৌনকর্মী’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র তাঁর পছন্দের কাজ ও ব্যক্তিত্বের জন্য। প্রশ্ন উঠছে—এটা কি নারী বিদ্বেষের নতুন রূপ, নাকি সামাজিক মিডিয়ার টক্সিক কালচারের ফল?
উরফি জাভেদ: বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা একজন স্বাধীন নারী
উরফি জাভেদ শুধু একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব নন, তিনি নিজের স্টাইল, মতামত ও আত্মবিশ্বাসের জন্য পরিচিত। প্রথম দিকে তাঁর পোশাক ও স্টাইল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও ধীরে ধীরে মানুষ তাঁর সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। তিনি শুধু ফ্যাশন আইকন নন, একজন স্পষ্টভাষী নারী যিনি নারীর অধিকার ও সমাজের যৌনতা-সংক্রান্ত ট্যাবু নিয়ে কথা বলতে ভয় পান না।
কিন্তু এই আত্মবিশ্বাসই কি তাঁকে টার্গেট করছে?
‘দ্য ট্রেটর্স’ জয় ও নেটিজেনদের রাগ
‘দ্য ট্রেটর্স’-এ উরফি জাভেদের জয় নেটিজেনদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, প্রতিযোগী হর্ষ গুজরাল ও পূরব ঝা-এর ফ্যানরা উরফিকে ‘ধোঁকাবাজ’ আখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু সমালোচনা সীমা ছাড়িয়ে গেছে—তাঁকে দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণ ও খুনের হুমকি, এমনকি অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে।
উরফি নিজেই ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্টে লিখেছেন,
“যখন কোনো নারীর কাজ পছন্দ হয় না, তখন তাকে ‘যৌনকর্মী’ বলা হয়। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার শো জেতার জন্য আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি যা-ই করি না কেন, মানুষ আমাকে ঘৃণা করবেই।”
নারী বিদ্বেষের চিরাচরিত চিত্র
এই ঘটনা শুধু উরফি জাভেদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি সমাজে নারী বিদ্বেষের একটি বড় উদাহরণ। নারীদের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতার ভাষা এখনও মিডিয়া ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হয়।
যদি নারী স্বাধীন হয়, তাকে ‘অশালীন’ বলা হয়।
যদি নারী সফল হয়, তাকে ‘চালাক’ বা ‘কুটনৈতিক’ বলা হয়।
যদি নারী নিজের মত প্রকাশ করে, তাকে ‘আক্রমণাত্মক’ বলা হয়।
উরফির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি শুধু একটি গেম শো জিতেছেন, কিন্তু এর জন্য তাঁকে যৌন সহিংসতার হুমকি পেতে হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার টক্সিক কালচার
সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যানোনিমিটি মানুষকে নির্দয় করে তোলে। কেউ মুখোশ পরে ঘৃণা ছড়ায়, কেউ ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে হুমকি দেয়। উরফির মতো সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও প্রকট, কারণ তাদের জীবন সর্বদা পাবলিক স্ক্রুটিনির মধ্যে থাকে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব: ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত হেট স্পিচ ও হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
আইনি ব্যবস্থা: সাইবার বুলিং ও হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক আইন প্রয়োগ করা দরকার।
সচেতনতা: নারীদের প্রতি সম্মান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে সামাজিক প্রচারণা জোরদার করতে হবে।
উরফির প্রতিক্রিয়া: আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব
উরফি জাভেদ এই সমস্ত হুমকি ও অপপ্রচারের মুখেও দমে যাননি। তিনি তাঁর ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন,
“লোকেরা আমাকে ঘৃণা করবে, এটা আমি জানি। কিন্তু আমি আমার পথে চলব।”
এই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে আলাদা করে তোলে। তিনি শুধু একটি রিয়্যালিটি শো জিতেননি, তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীকে ভয় দেখিয়ে, অপমান করে দাবিয়ে রাখা যাবে না।
সমাপ্তি: পরিবর্তনের সময় এসেছে
উরফি জাভেদের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে নারী বিদ্বেষ ও সাইবার বুলিং এখনও একটি বড় সমস্যা। শুধু আইন বা প্ল্যাটফর্মের উপর দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে, আমাদের ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে।
নারীদের সম্মান করুন, তাদের সাফল্যকে স্বীকৃতি দিন।
হেট স্পিচ রিপোর্ট করুন, নীরবতা ভাঙুন।
শিক্ষা ও সংবেদনশীলতা বাড়ান, আগামী প্রজন্মকে সহিষ্ণু করে গড়ে তুলুন।
উরফি জাভেদের মতো নারীরা যখন সামনে এগোয়, তখন সমাজের অন্ধকার দিকগুলোও প্রকাশ পায়। সময় এসেছে সেই অন্ধকার দূর করে একটি সুস্থ, সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করার।
আরও পড়ুন: বলিউডের ‘কাঁটা লাগা গার্ল’ শেফালি জারিওয়ালার অকালপ্রয়াণ: শোকের ছায়া